বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৯ সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ১৪ এনবিআর কর্মকর্তা বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সাম্প্রতিক আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে এবার আরও ১৪ জন কর, শুল্ক ও মূসক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। প্রকাশ্যে বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) পৃথক পৃথক আদেশ জারি করে তাঁদের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত জানায়। আদেশে সই করেছেন আইআরডি সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন—মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, ঢাকার কর অঞ্চল-৮–এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক সিফাত ই মরিয়ম, এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব শাহাদাত জামিল, ঢাকা কর অঞ্চল-২-এর যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুন, কর অঞ্চল-১৫-এর যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ, কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের কর কমিশনার মোরশেদ উদ্দীন খান, নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, কক্সবাজার কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার আশরাফুল আলম প্রধান, খুলনা কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার শিহাবুল ইসলাম, রংপুর কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার নুশরাত জাহান, কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান, খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বশর এবং ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা সবুজ মিয়া।

আইআরডি সূত্র জানায়, আজ দুপুর থেকে তাঁদের নামে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করা শুরু হয়। সন্ধ্যা নাগাদ মোট ১৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদেশ জারি হয়।

সূত্র আরও জানায়, গত মাসে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে যে আন্দোলন হয়, বরখাস্ত হওয়া এসব কর্মকর্তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। আন্দোলনে কেউ কেউ নেতৃত্বও দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মূসক নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ছিলেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি এবং ঢাকার কর অঞ্চল-৮-এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা ছিলেন সহসভাপতি।

সরকারি আদেশ অনুযায়ী, গত ২২ জুন বদলির আদেশ জারি করা হলে সেটি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে তাঁরা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন—এমন অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শেষে এই সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বরখাস্তকালীন তাঁরা সরকারি বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন।

প্রসঙ্গত, গত মাসে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে প্রায় দেড় মাসব্যাপী আন্দোলনে নামেন। ২৮ ও ২৯ জুন তাঁরা সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন। পরে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন স্থগিত করা হয়।

আন্দোলন প্রত্যাহারের পর থেকেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে একজন কমিশনার ও তিনজন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এছাড়া, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এনবিআরের সদস্যসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে, যাঁদের অধিকাংশই আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১২ মে সরকার অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি আলাদা বিভাগ গঠনের ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ‘সমঝোতার ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কার’-এর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন।