মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬ মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ভয়াবহ গরমে পানির তীব্র সংকটে ইরান, তেহরানে ছুটি ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলমান তীব্র দাবদাহের মধ্যে মারাত্মক পানির সংকটে পড়েছে পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরান। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, যা এই বছরের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

এমন অবস্থায় আগামী বুধবার তেহরান প্রদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া মানুষকে পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আহ্বানও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোববার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ইরানের জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মরুপ্রধান এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ দেখা দিচ্ছে। এর ফলে পানির ঘাটতি চরম আকার নিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে মানুষকে পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি রোববার এক্স (টুইটার)–এ এক পোস্টে জানান, তাপপ্রবাহের কারণে আগামী বুধবার তেহরান প্রদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “তীব্র গরম অব্যাহত থাকায় এবং পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় তেহরানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।”

আল জাজিরা বলছে, রোববার তেহরানের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সোমবার আরও বেড়ে ৪১ ডিগ্রি ছুঁতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।

ইরানে পানির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের শুষ্ক প্রদেশগুলোতে এই সংকট বেশি প্রকট। খরা, অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এবং ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে এই অবস্থার জন্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।

তেহরান সিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেহদি চামরান ইরানবাসীকে পানি সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “অপ্রয়োজনীয় পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন, নইলে সরবরাহে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।”

দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে পানির ব্যবহার সীমিত করার অনুরোধ জানিয়ে সতর্কতাও জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

তেহরান প্রাদেশিক পানি ব্যবস্থাপনা কোম্পানি জানিয়েছে, শহরজুড়ে পানির ব্যবহার অন্তত ২০ শতাংশ কমানো প্রয়োজন। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যেসব বাঁধ তেহরানকে পানি সরবরাহ করে, সেগুলোর জলাধার গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে কম পানির স্তরে পৌঁছেছে।”

এর আগে গত শনিবার দেশটির রক্ষণশীল পত্রিকা জাভান জানায়, রাজধানীর কিছু এলাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ পানির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে কিছু এলাকায় টানা ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পানিবিহীন থাকতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

এ নিয়ে রোববার দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইরানের জ্বালানিমন্ত্রী আব্বাস আলিয়াবাদি। তিনি বলেন, “সম্পদ ব্যবস্থাপনা আরও ভালোভাবে করতে গিয়েই কিছু এলাকায় সরবরাহ কমানো হয়েছে।”

চলমান তাপপ্রবাহ কেবল জীবনযাত্রাকেই বিপর্যস্ত করেনি বরং দেশজুড়ে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলেছে বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন।