 
  
																
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও পার্বত্য অঞ্চলের অশান্তি কেবল ধর্মীয় দ্বন্দ্বের কারণে নয়; এর পেছনে বড় কারণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘রামুসহ সারা দেশে বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের ১৩ বছর এবং গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ২০১২ সালের রামু ঘটনার সময় যেমন সরকারের মন্ত্রী-বিশেষজ্ঞরা ‘বাহ্যিক ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব হাজির করেছিলেন, তেমনি সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতেও একই ধারা দেখা যাচ্ছে। অথচ পরবর্তীকালে অনুসন্ধানে প্রমাণ হয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাই এতে জড়িত ছিলেন।
তিনি বলেন, প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। ভুয়া পোস্ট বা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রামে গ্রামে হামলা চালানো হচ্ছে, আবার নারীবিদ্বেষী আক্রমণও একইভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা স্বতঃস্ফূর্ত নয়; পেছনে রয়েছে শক্তিশালী পরিকল্পিত চক্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, গত এক বছরে নারীর ওপর হামলা অনেকাংশেই বেড়েছে। তিনি বলেন, যে জায়গাগুলোতে মন্দির-খানকা হামলা করা হয়েছে, সেগুলোতে রাজনৈতিক এবং সাম্প্রদায়িক একটা প্রভাব রয়েছে।
সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ ক্বাফি রতন বলেন, আমরা রামুর ঘটনার ১৩ বছর পর, সে নৃশংসতাকে স্মরণ করে এখানে সমবেত হয়েছি। খাগড়াছড়িতে যাদেরকে সেটেলার বলা হয়। তারা আজকে আক্রমণকারী এটা একটা ন্যারেটিভ। ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশে অন্যকিছু চলবে না, রামুতে যে ঘটনা ঘটেছিল, ফেসবুকের স্ট্যাস্টাসকে কেন্দ্র করে পুরো পাড়া জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটা হচ্ছে একধরনের ফ্যাসিজম। এটি হচ্ছে ধর্মীয় ফ্যাসিজম।
হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ২০১২ সালে ২৪টি বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা হয়েছে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে। কুমিল্লাতেও একই কাজ করা হয়েছে। মানুষের মধ্যে বর্ণবাদ বেড়েছে। তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যে পরিমাণ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা হয়েছে, সেখানে ২০ হাজারের অধিক মামলা হয়েছে। কিন্তু এ রাষ্ট্র বিচার করতে পারেনি।
অর্থনীতিবিদ ও লেখক সুজিত চৌধুরী বলেন, আমি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। তবে, ভাবিনি যে দেশে ফিরে আমাকে মন্দিরের ধ্বংসস্তূপ নিয়ে কাজ করতে হবে। আমি আশা করছি, সামনের দিকে রামুর মতো অন্য কোনো মন্দিরকে আর ধ্বংস হতে দেখা যাবে না।
মেঘমল্লার বসু বলেন, যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা গণঅভ্যুত্থান করেছিলাম, সেরকম আরেকটা গণঅভ্যুত্থান হয়তো আবারও প্রয়োজন। ১৩ বছর আগে রামুতে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার হলে আজকে আর কোনো মন্দির ভাঙা হতো না।
আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা দেন-বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য ডা. জয়দ্বীপ ভট্টাচার্য, শিল্পী গবেষক অরূপ রাহী, একটিভিস্ট ফেরদৌস আরা রুমি, সাংবাদিক তাহমিদাল জামি।