বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৪ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

লেজ নয়, রশি টানাটানি করুন

এম আবদুল্লাহ
নানা শঙ্কা ও উদ্বেগ-উৎকন্ঠার অবসান ঘটিয়ে সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩শ’ মন্ডপে মহা ধুমধামে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা সম্পন্ন হলো। কোন অঘটন ও অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো পূজা উদযাপন করতে পেরে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা সরকারসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এতে জনমনে স্বস্তির সুবাতাশ বইলেও সীমান্তের ওপারে বইছে দীর্ঘশ্বাস ও হতাশা। সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছে প্রতিবেশি দেশের উগ্র সাম্প্রদায়িক মিডিয়া। হিন্দুত্ববাদী আনন্দবাজার আর রিপাবলিক টিভির মতো সংবাদমাধ্যমগুলো ভিউ-বাণিজ্য ও অপসাংবাদিকতার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কলকাতা ও দিল্লির মিডিয়াপাড়া বাংলাদেশে পূজা উদযাপন ঘিরে অঘটনের প্রতীক্ষায় সম্ভবতঃ প্রহর গুনছিল ।
বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটলেও তিলকে তাল করে প্রচার করতে পারতো তারা। ড. ইউনূস সরকারকে বিশ্ব দরবারে ‘তালেবানী সরকার’ তকমা দিয়ে ‘জল ঘোলা’ করা যেত। সেই মোক্ষম সুযোগ তাদের হাতছাড়া হয়েছে। শুধু রাজধানী ঢাকা শহরেই ২৫৯টি মন্ডপে বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতেছেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। সরকার যেমন নিরাপত্তা দিয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলো সম্প্রীতির পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়’-এমন প্রচারণা ও মিথ এরই মধ্যে ভেঙ্গে গেছে।
সরকার এবার সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের দিকে অধিকতর নজর দেবে বলে আশা করা যায়। রজনৈতিক দলগুলো যতটা নির্বাচনমুখো হওয়ার কথা তা এখনও নজরে পড়ছে না। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। কবে ফিরবেন তার দিন-তারিখ অবশ্য এখনও অজানা। জামায়াত আন্দোলনে আছে। সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৭ দফা দাবিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। তাদের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরও ৬টি দল যুগপৎ কর্মসূচিতে রয়েছে। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে এখনও পর্যন্ত অনঢ় অবস্থানে থাকায় আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ঘোষিত নির্বাচন নিয়ে জনমতে কিছুটা সংশয় রয়েছে। জুলাই সনদ ও পিআর ইস্যু সহসা সুরাহা না হলে নির্বাচনী তফসিল যথাসময়ে ঘোষণা হবে কিনা সে সন্দেহের অবকাশ থাকবে।
আন্দোলন ও নির্বাচনের পাশাপাশি জামায়াতের এখন বিবর্তনকাল চলছে। বলা হচ্ছে প্র্যাগম্যাটিক হচ্ছে। মানে হলো, তত্ত্ব বা তাত্ত্বিক নিয়মের চেয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে রাজনীতি করতে চাচ্ছে দেশের ইসলামপন্থী বৃহৎ দলটি। তারা মধ্যপন্থা নিতে যাচ্ছে কিনা সে আলোচনা চলছে। নির্বাচনী কৌশলও অতীতের চেয়ে ভিন্নভাবে সাজাচ্ছে তারা। সদ্য সমাপ্ত দূর্গা পূজায় জামায়াতকে নতুন রূপে দেখা গেছে। সারাদেশে মন্ডপে মন্ডপে জামায়াত নেতাদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মন্ডপ পরিদর্শনকালে অতিউৎসাহী হয়ে অনেক জামায়াত নেতা মাত্রা অতিক্রম করেছেন।
জামায়াত নেতা ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি শিশির মনিরের একটি বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় চলছে। তিনি রোজা ও পূজাকে একই মূদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বর্ণনা করে বলেছেন- ‘রোজা ও পূজা মিলে বাংলাদেশ’। মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়কে একই বৃন্তের দু’টি কুসুম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর এ বক্তব্যে নেটিজানদের একটি অংশ তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বিশেষ করে কওমী অঙ্গনসহ ইসলামপন্থী অন্যান্য দলের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা শিশির মনিরের ভিডিও বক্তব্যটি শেয়ার করে জামায়াতের আদর্শিক বিচ্যুতি হিসেবে দেখাচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরাও এমন প্রতিক্রিয়ায় সঙ্গী হয়েছেন। কারণ এর আগে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ পূজামন্ডপ পরিদর্শনকালে দেবি দূর্গার প্রতি হাতজোড় করে সম্মান জানালে তা ব্যাপকভাবে শেয়ার করে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অনেক জামায়াত নেতাকর্মী। বিএনপি কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন-শিশির মনির যে বক্তব্য দিয়েছেন তা যদি বিএনপি’র কোন নেতার মুুখে উচ্চারিত হতো তাহলে জামায়াতের ভার্চুয়াল অ্যাক্টিভিস্টরা কী করতেন? হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীও সমালোচনার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। শুক্রবার এক মাহফিলে তিনি বলেছেন, ‘যারা পূজা আর রোজা একই বলে, এগুলো কি ইসলাম?’ সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন হেফাজত আমীর।
এডভোকেট শিশির মনির পরে আরেকটি ভিডিও বক্তব্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাতে আগের বক্তব্য থেকে তিনি খুব একটা সরেননি। দুঃখও প্রকাশ করেননি। বরং আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। বিদ্রোহী কবি নজরুলের কাব্যাংশ থেকে একই বৃন্তে দু’টি কুসুমের কথা উদ্বৃত করেছেন বলে জানান। বস্তুতঃ প্রতিক্রিয়াটা তীব্র হয়েছে রোজা ও পূজাকে একাকার করার কারণে। রোজা মুসলমানদের ৫টি মৌলিক ইবাদতের একটি। পূজা মুশরিকদের বৃহত্তম উৎসব। মুশরিকদের উৎসবে অংশ নেওয়া ও একাত্ম হওয়ার ব্যাপারে কোরআন ও হাদীসে ঈমানদারদের সতর্ক করা হয়েছে। সেখানে রোজা ও পূজার সমান্তরাল তুলনা কিভাবে চলে?
শিশির মনির ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি। হালে তরুণ ও মেধাবী উদীয়মান নেতা হিসেবে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয় ও সমাদৃত। সুনামগঞ্জে তাঁর নির্বাচনী এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের আসন সেটি। ভোট টানার জন্যে তিনি বক্তব্যের মধ্যে বাড়াবাড়ি করেছেন বলেই মনে করছেন জামায়াতের রাজনীতির প্রতি সহানুভূতিশীল বিশ্লেষকেরা। এমনকি দলের অনেক সাধারণ নেতাকর্মীও বক্তব্যটি মানতে পারছেন না। এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর নির্বাচনী এলাকাও কুমিল্লার হিন্দু অধ্যুষিত জনপদ। তিনিও পূজা মন্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। হাসনাত আবদুল্লার বক্তব্যটি শেয়ার করে অনেকে বলছেন- শিশির মনিরের তুলনায় হাসনাত আবদুল্লাহ অনেক বেশি সতর্কতা, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। মুসলিম ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যকে তিনি বিসর্জন দেননি।
প্র্যাগম্যাটিক হওয়ার অর্জন ও বিসর্জনের বিষয়ে জামায়াত নিশ্চয়ই সচেতন। বাস্তববাদী ব্যক্তি বা দল বিদ্যমান অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বাস্তবসম্মত ও কার্যকর উপায়ে কাজ করবে তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু একটি আদর্শিক সংগঠন ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সমাজ ও রাষ্ট্রের গড্ডালিকায় কতটা গা ভাসাতে পারে? দলীয় মূলনীতির প্রশ্নে কতটা আপস করতে বা উদার হতে পারে? এসব প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতকে এসব প্রশ্নের সদুত্তর দেওয়ার জন্যে প্রস্তত থাকতে হবে।
জামায়াত ঘরানার আলোচিত বক্তা মাওলানা তারেক মনোয়ারের বেফাঁস কথাবার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত ভাইরাল হচ্ছে। এতে ব্যক্তি তারেক মনোয়ারকে যেমন খেলো করছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত করছে জামায়াতকে। কারণ, তিনি জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতার সন্তানই শুধু নন, তাঁর মাহফিলগুলো আয়োজনের সঙ্গে দলের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে। দায় নিতে না চাইলেই দায় এড়ানো যায় না। মুফতি আমীর হামজার লাগামহীন বক্তব্যের জেরে ড্যামেজ কন্ট্রোলের উদ্যোগটাও ছিল বিলম্বিত।
এ নিবন্ধ লিখতে বসে চোখে পড়লো চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্ততঃ ২০ জন আহত হয়েছে। চ্যানেল-২৪ এর রিপোর্ট অনুযায়ী এক জামায়াত নেতা তাঁর ফেসবুকে তারেক রহমান ও বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার বিকৃত ছবি শেয়ার করাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। নির্বাচনকালে এ ধরনের সংঘাত সহিংসতার আশঙ্কা বাড়ছে। ১৩ মাস আগের সহযাত্রী দু’টি দল ক্রমেই মুখোমুখি হচ্ছে। দূরত্ব বাড়ছে। ভার্চুয়াল প্লাটফর্মকে দু’দলের অ্যাক্টিভিস্টরা কুরুক্ষেত্রে পরিনত করেছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের কোন চাঁদাবাজি, দখলদারি বা অপরাধের ঘটনা পেলে মূহুর্তের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন জামায়াত-শিবিরের নেটিজেনরা। আবার অপেক্ষাকৃত কম হলেও জামায়াতের কোন নেতাকর্মীর তেমন ঘটনায় সম্পৃক্ততা পেলে পাল্টা হামলে পড়ছেন বিএনপি সমর্থকেরা। আবার দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে ভার্চুয়াল যুদ্ধে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিসরা। ফলে বর্তমানে দেশে সক্রিয় প্রধান দু’টি দলই সাধারণ মানুষের কাছে কমবেশি ভাবমুর্তির সংকটে পড়ছে।
জামায়াতের বিবর্তনের আরেকটি দিক হচ্ছে- প্রথমবারের মতো দলের শপথধারী জনশক্তির বাইরের জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের প্রার্থী করার চিন্তা। এমনকি অমুসলিম প্রার্থীকেও বিবেচনায় নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানা যাচ্ছে প্রকাশিত সংবাদে। আবার জামায়াতের দলীয় শৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটছে। তিনটি সংসদীয় আসনে দলের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ প্রকাশ্যে এসেছে। আসনগুলো হচ্ছে, পাবনা-৫, ময়মনসিংহ-৬ ও চট্টগ্রাম-১৫। এছাড়া জামায়াতের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নৈতিক স্খলনজনিত ঘটনাও অভূতপূর্ব। গত পক্ষকালে নওগাঁ ও চাঁদপুরে দু’টি যৌন হয়রানি সংক্রান্ত ঘটনায় জামায়াত নেতা-কর্মীর নাম আসায় দলের ভেতরে-বইরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। যে মানদণ্ডে জামায়াত জনশক্তি অন্তর্ভূক্ত ও নেতৃত্ব নির্ধারণ করে আসছিল তা শিথিল করেছে। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ প্রচলিত ধারার অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের জন্যে জামায়াতের দরজা উন্মুক্ত করায় দলীয় পরিচয়ে সামাজিক অপরাধসহ নৈতিক স্খলনজনিত ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের ক্ষমতার লড়াই এবং সম্ভাব্য সংঘাত কমিশনকে ভাবাচ্ছে। সরকারও দুশ্চিন্তামুক্ত নয়। নির্বাচন কশিননের বিভিন্ন পদক্ষেপকে বিতর্কিত করতে দু’পক্ষের পরষ্পরবিরোধী অবস্থান নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এরই মধ্যে ভোট কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের কাছে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্যে জনবল চেয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তা নিয়ে বিএনপি’র সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তারা বলছেন, ইসলামী ব্যাংকের দশ লক্ষাধিক কর্মকর্তাকে নির্বাচনে প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং বা পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল ডাকসুর মতো হবে। বস্তুতঃ সকল জাতীয় নির্বাচনেই ভোট কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাংকাররা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অতীতেও ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কাজ করেছেন। তখন বিএনপি ও জামায়াত এক সঙ্গে নির্বাচন করায় সে প্রশ্ন ওঠেনি। এবার ভিন্ন মেরুতে লড়ার কারণে ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিয়ে আপত্তি প্রবল হয়ে উঠছে।
বিভিন্ন ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াত একে অপরের দল থেকে রোক বাগানোর মিশনে নেমেছে। কোথাও জামায়াত থেকে বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে। আবার পাল্টা হিসেবে বিএনপি থেকে জামায়াতে যোগদানের ঘটনাও ঘটছে। কয়েক দিন আগে ভোলায় নাজিম উদ্দিন আলমের হাতে ফুল দিয়ে জামায়াত নেতার নেতৃত্বে কয়েকশ’ নেতাকর্মী বিএনপিতে যোগদানের খবর ফলাও করে প্রচার করে বিএনপি’র সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্টরা। জবাবে বৃহস্পতিবার গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল বারী মন্ডল তাঁর দুই শতাধিক সমর্থক নিয়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের খবর ব্যাপকভাবে শেয়ার করেন জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা। আবদুল বারী ১৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের আদর্শ ও কাজকর্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমার দুই শতাধিক সমর্থক নিয়ে দলটিতে যোগ দিয়েছি।’
এদিকে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কমিশনও নানা বিতর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যে পর্যবেক্ষক সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্প্রতি ৭৩টি সংস্থার একটি প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে, যারা আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব নিতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদপত্রের অনুসন্ধানে যা উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক ও হতাশাজনক। তালিকার অনেক সংস্থাই অকার্যকর। তালিকায় স্থান পাওয়া অনেক সংস্থার ঠিকানা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কোথাও সংস্থাটির প্রধানের ব্যক্তিগত বাসভবনকে অফিস দেখানো হয়েছে, কোথাও নির্মাণাধীন ভবনকে কার্যালয় বলা হয়েছে। কোনো সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মী বলতে বাবা-ছেলে দুজন ছাড়া কেউ নেই। যাদের পর্যবেক্ষণ কাজে সক্ষমতা নেই, তাদেরকে দায়িত্ব দিলে পর্যবেক্ষণ কার্ড ও রিপোর্ট বেচাকেনা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এনসিপি’র সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বিরোধটাও কতদূর গড়াবে বোঝা যাচ্ছে না। নবগঠিত দলটির প্রত্যাশিত প্রতীক ‘শাপলা’ দেওয়া যাবে না জানিয়ে নির্বাচন কমিশন দলটির কাছে ৫০টি প্রতীকের একটি তালিকাসহ চিঠি দিয়েছে। বলা হয়েছে, সেখান থেকে বিকল্প প্রতীক পছন্দ করতে। কিছু মিডিয়া বেগুন, বালতির ছবি দিয়ে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারি দলটির প্রতি এক ধরনের উপহাস ও তাচ্ছিল্য করতে দেখা যাচ্ছে। ওইসব সংবাদ শেয়ার করে আওয়ামী অ্যাক্টিভিস্টরা নোংরা মন্তব্য করছে। এনসিপি কিন্তু ‘শাপলা’ প্রতীক পেতে অনমনীয় অবস্থানে রয়েছে। এর আগে শাপলা না দিলে নির্বাচন কিভাবে হয় তা দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন দলের একজন নেতা। নির্বাচন কমিশন মাহমুদুর রহমান মান্নার দলকে শাপলা না দেওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন। মান্না বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, এনসিপিকে শাপলা দিলে তাঁর আপত্তি নেই, এ নিয়ে মামলায় যাবেন না তিনি। বিষয়টির দ্রুত সুরাহা হওয়া বাঞ্ছনীয়। কোন পক্ষেরই অনমনীয় অবস্থান নেওয়া ঠিক হবে না।
পিআর পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ চলছে। তাদের নিজ নিজ দলের নেতারা টকশোগুলো মাতিয়ে রাখছেন। তারা একে অন্যকে কটাক্ষ করছেন, করে চলছেন রীতিমতো আক্রমণ। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তারা মাঠে আন্দোলনে নামার হুমকি দিচ্ছেন; কোনো কোনো দল এরই মধ্যে নেমেও পড়েছে। ফলে জনগণ দ্বিধান্বিত ও শঙ্কিত যে, কী হতে যাচ্ছে দেশে! দ্রুত পরিবর্তন হওয়ার পরিস্থিতিতে তাদেরও প্রশ্ন—নির্বাচন কি আদৌ সময়মতো হবে? বিএনপি কি পিআর মানবে? বিএনপি যদি না মানে, তাহলে জামায়াত ও তার সমমনা জোট কী করবে? আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে পারবে?
পাল্টাপাল্টি যোগদান চলছে।

রোকনুজ্জমান খানের একটা কবিতা ধার করে শেষ করি।
একটা দড়ির দু’দিক থেকে টানছে দু’দল ছেলে,
তাইনা দেখে বনের বানর লাফায় খেলা ফেলে।
সকল বানর ফন্দি আঁটে, জবর মজার খেলা,
এমন খেলা খেলে মোরা কাটিয়ে দেব বেলা।
কিন্তু দড়ি মিলবে কোথায়; ঘাবড়ে গেল মাথা,
পালের সেরা বানর বলে মগজ তোদের যা-তা
নেইকো দড়ি? বয়েই গেল ভাবিস মিছে হাবা,
লেজে লেজে ধরবো টেনে হবে দড়ির বাবা।
যেই না বলা দু’দল বানর দু’দিক থেকে বসে,
একের লেজটি ধরলো টেনে জোরসে চেপে-কষে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক