নিজস্ব প্রতিবেদক: স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের প্রতি নজরুলের দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস থেকে তাদের মধ্যে কলহ ছিল। পরকীয়ার সন্দেহ ও সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে পারেন এই শঙ্কা থেকেই স্ত্রীকে খুন করে ডিপ ফ্রিজে লাশ লুকিয়ে রেখেছিলেন— স্বামী নজরুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, “স্ত্রীর ওপর সন্দেহ ছিল নজরুলের। তিনি মনে করতেন, তাসলিমা অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখছেন এবং তাঁর সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে পারেন। এই সন্দেহই শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যার দিকে ঠেলে দেয়।”
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বংশালের নবাবপুর রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
তদন্তে উঠে এসেছে, কলাবাগান এলাকার একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন নজরুল। পারিবারিক কলহ ছিল তাদের নিত্যদিনের বিষয়। গত রোববার রাতে বাসায় ফিরে ফ্ল্যাটের দরজার তিনটি তালার মধ্যে দুটি খোলা দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন নজরুল। এরপর দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী তাসলিমাকে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।
হত্যার পর আলামত গোপনের জন্য নজরুল লাশ গামছা ও বিছানার চাদরে মুড়িয়ে ফ্রিজের ভেতর লুকিয়ে রাখেন। রক্তমাখা তোশক উল্টে দেন, মেঝে পরিষ্কার করেন এবং নিজের কাপড় ধুয়ে ফেলেন— এমন তথ্যও পুলিশ জানিয়েছে।
পরদিন সকালে নিজের বড় মেয়েকে তিনি জানান, “তোমার মা অন্য একজনের সঙ্গে চলে গেছে।” কিন্তু মেয়েটি ঘরের দেয়ালে রক্তের দাগ দেখে সন্দেহ প্রকাশ করে। এরপর নজরুল দুই মেয়েকে নানার বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে আদাবরে তাদের ফুপুর বাসায় রেখে প্রাইভেটকারে পালিয়ে যান।
ঘটনায় সন্দেহ হলে তাসলিমার ছোট ভাই নাঈম হোসেন সোমবার সন্ধ্যায় কলাবাগান থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে এবং ফ্রিজ খুলে মাছ, মাংসের পলিথিন সরিয়ে ভিতরে চাদর মোড়ানো লাশ উদ্ধার করে।
পরে নাঈম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্য এবং প্রযুক্তির সহায়তায় নজরুলের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে বংশাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ডিসি মাসুদ আলম বলেন, “প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘদিনের সন্দেহ ও দাম্পত্য কলহ থেকেই নজরুল এই ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেয়।”
পুলিশের ভাষ্য, তাসলিমা আক্তারের দুই ছোট সন্তান এখন তাঁদের আত্মীয়দের হেফাজতে রয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে, এবং নজরুলকে আদালতে রিমান্ডের আবেদনসহ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।