বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৪ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ভারতে মাঠে নারীদের নামাজ আদায়, পরে গোমূত্র ঢেলে করা হলো ‘শুদ্ধ’

ন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের মহারাষ্ট্রে ঐতিহাসিক শানিওয়ারওয়াড়া দুর্গে মুসলিম নারীদের নামাজ আদায় ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নামাজের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিজেপি নেতাদের ‘গোমূত্র শুদ্ধিকরণ’ কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজ্যের রাজনীতিতে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুণের ঐতিহাসিক এই দুর্গে সম্প্রতি কয়েকজন মুসলিম নারী নামাজ আদায় করেন। সেই দৃশ্য ধারণ করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিজেপি সংসদ সদস্য মেধা কুলকার্নির নেতৃত্বে একদল কর্মী দুর্গে গিয়ে ওই স্থানটি ‘গোমূত্র দিয়ে শুদ্ধ’ করার কর্মসূচি পালন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে।

এরপর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর (এএসআই)-এর এক কর্মকর্তা ঘটনাটি নিয়ে পুণে থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দুর্গ এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত নামাজ আদায়কারী নারীদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিজেপি নেতারা দুর্গের ভেতর নামাজের স্থানটিকে গোমূত্র দিয়ে ধুয়ে ‘শুদ্ধি’ অনুষ্ঠান পালন করছেন এবং ‘শিব বন্দনা’ পাঠ করছেন। এই ঘটনাকে ‘অশোভন’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপি সাংসদ মেধা কুলকার্নি। তিনি বলেন, “শানিওয়ারওয়াড়া নামাজের জায়গা নয়। ঐতিহাসিক স্থাপনার মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। প্রশাসনের উচিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।”

অন্যদিকে রাজ্যের মন্ত্রী নিতেশ রানে বলেন, “শানিওয়ারওয়াড়া আমাদের ঐতিহ্য ও বীরত্বের প্রতীক। এটি হিন্দু সমাজের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। যদি হিন্দুরা হাজি আলিতে হনুমান চালিশা পাঠ করে, তাতে মুসলমানদের অনুভূতি যেমন আঘাত পাওয়া উচিত নয়, তেমনি নামাজ পড়তেও তাদের মসজিদে যাওয়া উচিত।”

বিজেপির এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধী ‘মহাযুতি’ জোট। এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ারের মুখপাত্র রূপালি পাটিল থোম্বরে অভিযোগ করেন, “মেধা কুলকার্নি ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করছেন। পুলিশের উচিত তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করা।”

শিবসেনা নেত্রী নীলম গোহরের মতে, শানিওয়ারওয়াড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে বিশেষ নিয়মের অধীন। তিনি বলেন, “এই স্থাপনায় যেকোনো ধর্মীয় কার্যক্রমই নিয়মবিরুদ্ধ। প্রশাসনই সিদ্ধান্ত নেবে, কেউ যেন মনে না করে তারাই সরকার।”

ঘটনাটি এখন পুরো রাজ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সামাজিক ও রাজনৈতিক দুই ক্ষেত্রেই এটি নতুন করে ধর্মীয় সহনশীলতা ও প্রশাসনিক নীতিমালার প্রশ্ন তুলেছে।