বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৪ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ভৈরবে ট্রেনে পাথর মারার ঘটনায় ১৫০ অজ্ঞাত আসামি করে মামলা, ৩ কিশোর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক: জেলার দাবিতে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় মামলা করেছেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে রেলওয়ে থানায় তিনি ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে এই মামলা দায়ের করেন। মামলার পর এ ঘটনায় মধ্যরাতে রেলওয়ে ডিবি পুলিশ ও রেলওয়ে থানা পুলিশ তিনজন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছেন।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে আদালত মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব রেলওয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদ আহমেদ।

মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, পৌর শহরের পঞ্চবটী বউ বাজার এলাকার লোকন মিয়ার ছেলে সাগর মিয়া ওরফে ফহিম (১৭), একই এলাকার হুশিদ মিয়ার ছেলে সাজন মিয়া (১৭) ও জজ মিয়ার ছেলে আরমান মিয়া (১৭)।

রেলওয়ে থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভৈরবকে ৬৫তম জেলার দাবিতে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা ১০টা ২৫ মিনিটে নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আন্তঃনগর ননস্টপ উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন আটক করে কঠোর অবরোধ গড়ে তুলে। দীর্ঘ ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট আটক থাকার পর আন্দোলনকারীদের পরামর্শে ট্রেন হুইসেল দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে। পরে ১টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের সরকারি সম্পদ নষ্ট করে। এ ঘটনায় ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রাতে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর রাতেই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ভাঙচুরে সম্পৃক্ত থাকায় ৩ জন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩ বছরে রেলওয়ে থানায় পাথর নিক্ষেপ ও ট্রেনে আক্রমণের ঘটনায় ৩টি মামলা হয়েছে। এছাড়াও ভৈরব থেকে নরসিংদী পর্যন্ত রেলপথে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। ভৈরবে হওয়া ৩টি মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি মো. সাঈদ আহমেদ বলেন, ২৭ অক্টোবর জেলার দাবিতে ব্লকেড কর্মসূচির সময় আন্দোলনকারীরা ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় একাধিক যাত্রী আহত হলেও গুরুত্বর আহত ১ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। ঘটনার দিন রাতেই রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ বাদী হয়ে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকীদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ কাজ করছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ বলেন, নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আন্তঃনগর ননস্টপ উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন আটক না করতে আন্দোলনকারীদের একাধিকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা ট্রেনটিকে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আন্দোলনকারীদের কথা মতো ট্রেনটি হুইসেল দিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে আন্দোলনকারীরা বৃষ্টি মতো পাথর নিক্ষেপ করে। কয়েক মিনিট পর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও রেলওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনের একটি লুকিং গ্লাস, একটি হেড লাইট, সাইট গ্লাসসহ ট্রেনের বগিতে বিভিন্নভাবে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মালামালের ক্ষতি হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি ১৫০ আসামি করে মামলা দায়ের করেছি। তিনি আরও বলেন, ভৈরব থেকে নরসিংদী পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় পাথর ছুড়াসহ, বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে আমরা রেলওয়ে পুলিশ, আরএনবি ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। যাত্রীদের জানমালের যেন কোন ক্ষতিসাধন না হয়। এছাড়াও ট্রেনের ভেতর যাত্রীদের নিয়মিত সচেতন করা হয়।