শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

ইসরায়েলকে অবিলম্বে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

মুহাম্মাদ শোয়াইব

২০২৪-২০২৫ মৌসুমের জন্য প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উদ্বেগজনক হারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু দেশের এমন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ বা ইসরায়েলের নীতির সমালোচনার কণ্ঠস্বর দমন করতে নেওয়া হয়েছে — বিশেষ করে গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে।
সংস্থাটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় “গণহত্যার পর্যায়ে উন্নীত কর্মকাণ্ড” চালানোর অভিযোগ তুলেছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বিস্তৃত লঙ্ঘনের প্রমাণ উপস্থাপন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলাগুলো ছিল অবৈধ এবং সেগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সেবা অবকাঠামো লক্ষ্য করে চালানো হয়, যার ফলে সাধারণ মানুষ তাদের জীবনধারণের ন্যূনতম উপকরণ থেকেও বঞ্চিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের জড়িত থাকার অভিযোগ
প্রতিবেদনে লন্ডনের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, তারা একদিকে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে নিজ দেশের জনগণের নাগরিক স্বাধীনতাও সীমিত করছে।
এই বিষয়ে আলজাজিরা নেট-কে দেওয়া এক মন্তব্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-র সরকারি ও রাজনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক পরিচালক কারলা ম্যাকলারেন বলেন, “যেখানে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করছে, সেখানে যুক্তরাজ্য সরকার অস্ত্র রপ্তানি অব্যাহত রাখছে — এটি শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, বরং চলমান গণহত্যায় যুক্তরাজ্যকে সরাসরি জড়িয়ে ফেলছে।”
তিনি আরও বলেন, “যখন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে এবং অপরাধীদের কোন শাস্তি হচ্ছে না, তখন এসব নৃশংসতার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”

গণহত্যার অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আলজাজিরা নেট-কে দেওয়া বক্তব্যে জানায়, ইসরায়েলের গাজা আগ্রাসন ছিল “নির্বিচার বোমাবর্ষণ, পূর্ণাঙ্গ অবরোধ এবং সমষ্টিগত শাস্তির” মিশ্রণ। সংস্থাটি বলেছে, এই পরিকল্পিত নীতিগুলো হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের — যাদের বেশিরভাগই শিশু — মৃত্যুর কারণ হয়েছে এবং গাজার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে।
তারা জোর দিয়ে বলেছে, “ইসরায়েলি বাহিনী স্পষ্টভাবে গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে, যা আন্তর্জাতিক জবাবদিহির যন্ত্রগুলোকে অবিলম্বে সক্রিয় করার দাবি রাখে।” পাশাপাশি, সংস্থাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চলমান তদন্তে সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে, যেখানে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।
অ্যামনেস্টি বিশ্বের সব দেশের সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষা করে এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি বা ইসরায়েলের নীতির সমালোচনাকে অপরাধে পরিণত করা বন্ধ করে।

এসএসএইচ.