রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

দুর্নীতির মামলায় খালাস পেলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু

স্টাফ রিপোর্টার :
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় খালাস পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ফালু। রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। বিচারক স্পষ্টভাবে বলেন, “মোসাদ্দেক আলী ফালু সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। তার যদি অবৈধ সম্পদ থেকেও থাকে, তাহলে সেসব সম্পদ অবরুদ্ধ করা দরকার ছিল, কিন্তু তাও করা হয়নি। ফলে আইনের দৃষ্টিতে তাকে খালাস দেওয়া হলো।”

রায়ের দিন মোসাদ্দেক আলী ফালু তার স্ত্রী মাহবুবা সুলতানাকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে হাজির হন। রায় ঘোষণার পর তিনি আদালত কক্ষ ত্যাগ করার সময় নেতাকর্মীদের অভিনন্দন গ্রহণ করেন। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এই মামলার সূত্রপাত হয় ২০০৭ সালের ৮ জুলাই, যখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানীর মতিঝিল থানায় ফালু ও তার স্ত্রী মাহবুবার বিরুদ্ধে মামলা করে। অভিযোগে বলা হয়, ফালু দুদকের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাওয়ার পর ২০০৭ সালের ১ মার্চ তার আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পদের হিসাব জমা দেন। তবে পরবর্তী তদন্তে জানা যায়, তার ৪৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে এবং ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন তিনি।

২০০৮ সালে মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। এরপর আসামিরা হাইকোর্টে মামলা বাতিলের আবেদন করেন, যার ফলে মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় স্থগিত থাকে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ফালুর স্ত্রীর ক্ষেত্রে অব্যাহতির আদেশ দিলেও ফালুর আবেদন খারিজ করে দেন। ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট পলাতক থাকা অবস্থায় ফালুর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। তবে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় আরও পাঁচ বছর পর, ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। অবশেষে যুক্তিতর্ক ও সাক্ষ্য পর্ব শেষ করে আদালত এই রায় ঘোষণা করলেন।

মোসাদ্দেক আলী ফালু ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ায় তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

এদিকে মামলার দীর্ঘসূত্রতা, রাষ্ট্রপক্ষের দুর্বল প্রস্তুতি ও প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থতা নিয়ে আইনি মহলে আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের মামলায় যথাযথ তদন্ত ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকলে রায় আসামির পক্ষে যাওয়া স্বাভাবিক।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমদ আলী সালাম বলেন, “আদালতের রায় আমাদের জন্য হতাশাজনক। তবে আমরা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছি।”

এই রায়ের মধ্য দিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি আলোচিত মামলার নিষ্পত্তি হলো।