স্টাফ রিপোর্টার :
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনায় কোনো আশ্বস্তিমূলক সিদ্ধান্ত না আসায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। শুধু তা-ই নয়, শিগগিরই আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা ইয়াছমিনের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠকে বসেন শিক্ষার্থীদের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকের পর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মাশফিক ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “আলোচনার নামে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা উপদেষ্টার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার জন্য এসেছিলাম, অথচ আমাদের একজন অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে বসানো হয়েছে। এই বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট নই।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কোনো সুস্পষ্ট আশ্বাস মেলেনি। ফলে আমরা আমাদের আন্দোলন চলমান রাখব এবং শিগগিরই আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।”
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি:
১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে প্রমোশন কোটা বাতিল: ৩০% প্রমোশন কোটা বাতিল, হাইকোর্টে বাতিল হওয়া অবৈধ প্রমোশন রায় কার্যকর, এবং ২০২১ সালে রাতের আঁধারে দেওয়া বিতর্কিত নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
২. ভর্তির বয়সসীমা ও কারিকুলাম সংস্কার: ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তি নিষিদ্ধ, উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু এবং একাডেমিক কার্যক্রম ধাপে ধাপে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
৩. চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন: দশম গ্রেডের জন্য ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সংরক্ষিত কোটা থাকা সত্ত্বেও তাদের নিম্ন পদে নিয়োগের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাপনায় দক্ষ জনবল নিয়োগ: বোর্ড চেয়ারম্যান, পরিচালকসহ সব প্রশাসনিক পদে কারিগরি শিক্ষিত ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার এবং শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের দাবি।
৫. স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় ও সংস্কার কমিশন: ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ নামে পৃথক মন্ত্রণালয় এবং ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৬. উচ্চশিক্ষার সুযোগ: পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করে তাদের ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এই দাবিগুলোর পক্ষে ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে শুরু করে সারাদেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছেন। বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে বিভিন্ন জেলা শহরেও সড়ক অবরোধ করা হয়। আন্দোলন আরও জোরদার করতে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণাও করেন, যা বৈঠকের আগে সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিল।
এদিকে, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান খানকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। অনেকেই এটিকে সরকারের ‘দৃষ্টি ঘোরানোর কৌশল’ বলেও মন্তব্য করছেন।