আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
সিঙ্গাপুরে শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নাগরিকরা ভোট দিচ্ছেন, যেখানে পিপলস অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) টানা শাসন অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তবে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকটের মুখে নতুন প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াংয়ের নেতৃত্বে জনসমর্থনের একটি বড় পরীক্ষা এটি।
এই নির্বাচনে মূলত পিএপির জনপ্রিয়তার একটি বারোমিটার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই — ১৯৬৫ সালেরও আগে — দেশটিতে ক্ষমতা ধরে রাখা পিএপি অতীতের নির্বাচনে প্রায় ৯০ শতাংশ আসনে জয় পেয়েছে। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে তাদের জনপ্রিয় ভোট কমে ৬০.১ শতাংশে নেমে আসে, যা তাদের অন্যতম খারাপ ফলাফল ছিল। নতুন প্রধানমন্ত্রী ওয়াং এবার সেই ফলাফলের উন্নতি করতে চান।
৫২ বছর বয়সি লরেন্স ওয়াং গত বছর সিঙ্গাপুরের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের কাছ থেকে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন, যিনি আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইউ-এর পুত্র। ওয়াং ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করে নতুন নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শনিবার সকাল স্থানীয় সময় ৮টায় টানা বৃষ্টির মধ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে বৃষ্টি খানিক পরই থেমে যায়। দুপুর নাগাদ ১২৪০টি ভোটকেন্দ্রে অর্ধেকের বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সিঙ্গাপুরে নাগরিকদের ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক।
ওয়াং সিঙ্গাপুর বোটানিক গার্ডেনসের কাছে একটি কেন্দ্রে দুপুরে ভোট দেন। তিনি ভোটের আগে বা পরে কোনো মন্তব্য করেননি।
বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর সিঙ্গাপুরে জীবনযাত্রার ব্যয় এবং আবাসনের অভাব বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক-যুদ্ধে বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়লে মন্দার আশঙ্কার কথাও সরকার জানিয়েছে।
নির্বাচনে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা
সিঙ্গাপুরের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে আসছে পিএপি। তাদের রয়েছে বিশাল সদস্যসংখ্যা, রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রভাব এবং প্রচুর আর্থিক ও সাংগঠনিক সম্পদ। বিপরীতে বিরোধী দলগুলো বেশ দুর্বল এবং অল্পসংখ্যক আসনে নির্বাচন করছে।
এই নির্বাচনে পিএপি ৯৭টি আসনের সবকটিতেই প্রার্থী দিয়েছে, যেখানে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্স পার্টি লড়ছে মাত্র ২৬টি আসনে। গতবার এই দলটি ১০টি আসন জিতে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করেছিল।
যদিও পিএপির পরাজয় অসম্ভব বলেই মনে করা হচ্ছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি বিরোধীরা আরও কিছু আসন জিততে পারে, তাহলে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক চিত্র কিছুটা বদলে যেতে পারে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে বিকল্প কণ্ঠস্বর, অধিকতর জবাবদিহিতা ও প্রাণবন্ত বিতর্কের আকাঙ্ক্ষা বেড়েছে।
সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ল্যাম পেং এর বলেন, ‘প্রতি নির্বাচনে পিএপির জনপ্রিয় ভোট কিছুটা করে কমে যাওয়া স্বাভাবিক। তারা যদি এবার ৫৭ বা ৫৮ শতাংশ ভোট পায়, তাহলে কেউই অবাক হবে না — এমনকি পিএপি নিজেরাও নয়।’
তবে পিএপি চায় না কোনো ‘সারপ্রাইজ’ হোক। প্রধানমন্ত্রী ওয়াং সতর্ক করে বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিসভার সদস্যরা যদি পরাজিত হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা এবং সিঙ্গাপুরকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ঝুঁকি থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।