আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের শাসনব্যবস্থায় পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে। তবে উদ্বেগ রয়ে গেছে কিছু বিষয়ে।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক সরকারের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া পূর্ববর্তী সরকারের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক দায়মুক্তির অভিযোগ ছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রলীগ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায় বলেও যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
মানবাধিকার-বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক এই প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, টানা কয়েক সপ্তাহের ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন এবং পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যুব সংগঠনের সঙ্গে সংঘর্ষে শত শত মানুষের নিহত হওয়ার পর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা (প্রধানমন্ত্রীর সমতুল্য) করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। আগস্টে কিছু ঘটনা ঘটলেও দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়েছে, যদিও কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে।
পূর্ববর্তী সরকারের সময় যেসব বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল তারমধ্যে ছিল— বেআইনি বা ইচ্ছাকৃত হত্যা, গুম, নির্যাতন বা অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ বা শাস্তি, নির্বিচারে গ্রেফতার বা আটক, বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত দমননীতি, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় গুরুতর বাধা (যেমন সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা বা হুমকি, অযৌক্তিক গ্রেফতার বা মামলা, সেন্সরশিপ), শ্রমিকদের সংগঠন তৈরির স্বাধীনতায় বড় ধরনের বাধা, শ্রমিক নেতা ও ইউনিয়ন সদস্যদের ওপর সহিংসতা বা হুমকি এবং শিশুশ্রমের ভয়াবহতম রূপের ব্যাপক উপস্থিতি।
এ ছাড়া পূর্ববর্তী সরকারের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক দায়মুক্তির অভিযোগ ছিল। খুব কম ক্ষেত্রেই কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত ও শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক সরকারের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে।
মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমের নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুলাই ও আগস্টে সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায়। এসব অপরাধের দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের সহযোগিতায় দেশের সাধারণ বিচারব্যবস্থা ও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল— দুটি কাঠামোই ব্যবহার করেছে।