শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭ সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ইউক্রেনে এক রাতে ৬০০’র বেশি ড্রোন-মিসাইল হামলা চালাল রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া এক রাতে ইউক্রেনের দিকে ৫৭৪টি ড্রোন ও ৪০টি মিসাইল ছুড়েছে—যা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা বলে জানিয়েছে কিয়েভ। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানায়, মোট ৬১৪টি ড্রোন ও মিসাইলের মধ্যে ৫৭৭টি ভূপাতিত করা সম্ভব হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

লভিভ অঞ্চলে এক ড্রোন ও মিসাইল হামলায় একজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও তিনজন। ২০টিরও বেশি বেসামরিক ভবন—যার মধ্যে আবাসিক ঘর ও একটি শিশু বিদ্যালয় রয়েছে—ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সকারপাথিয়ায় একটি মার্কিন ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠানে ক্রুজ মিসাইল হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। ওই মার্কিন কোম্পানি কফি মেশিনসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি সরঞ্জাম উৎপাদন করে থাকে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা একে ‘গুরুতর ক্ষতি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, হামলাগুলো যুদ্ধ বন্ধের জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করেছে।

হামলায় হাইপারসনিক, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। এগুলোর বেশিরভাগ ছোঁড়া হয়েছে পশ্চিম রাশিয়া ও কৃষ্ণসাগর এলাকা থেকে, আরেকটি মিসাইল এসেছে রাশিয়া-দখলকৃত ক্রিমিয়া থেকে।

ট্রাম্পের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা :

এই হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সম্প্রতি আলাস্কায় ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর হোয়াইট হাউসে ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শুরুতে ট্রাম্প নিজেকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দিলেও পরে জানান, পুতিন-জেলেনস্কি একা বৈঠক করাই ভালো হবে: ‘প্রয়োজন হলে আমি যাব, তবে এখন আমার মনে হচ্ছে তাদের একা দেখা করা উচিত।’

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে ‘নিরপেক্ষ ইউরোপে’—যেমন সুইজারল্যান্ড বা অস্ট্রিয়ায়—বৈঠকে বসতে প্রস্তুত। তিনি ইস্তাম্বুলকেও বাতিল করেননি, তবে বুদাপেস্টকে (হাঙ্গেরি) কঠিন বিকল্প আখ্যা দিয়েছেন, কারণ ভিক্টর অরবান সরকারের রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা এখনও মস্কোর কাছ থেকে কোনো গুরুতর আলোচনার ইঙ্গিত পাইনি।’

যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি :

ইউক্রেনীয় সেনারা জানায়, রাশিয়া দক্ষিণের জাপোরিঝঝিয়া ফ্রন্টে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করছে। তারা কুরস্কের দিক থেকে কিছু সেনা সরিয়ে ওই এলাকায় পাঠাচ্ছে।

অন্যদিকে, ইউক্রেন জানিয়েছে তারা রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলের একটি তেল শোধনাগারে হামলা চালিয়েছে। দখলকৃত দোনেৎস্ক শহরে একটি রুশ ড্রোন ঘাঁটিসহ বেশ কিছু সামরিক ও অবকাঠামো স্থাপনাও তারা লক্ষ্যবস্তু করেছে।

২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে দনবাস অঞ্চলের লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের বড় অংশ দখলে নিয়েছে মস্কো। বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড, যার মধ্যে ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত।