বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২ পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে উদ্বেগ জানালো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো

মুক্তবাণী ডেস্ক:

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুপস্থিতিতে বিচার এবং মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। পৃথক বিবৃতিতে তারা এ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিক্রিয়া

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের অনুপস্থিতিতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং তাদের পছন্দের আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ ছিল না, যা গুরুতর মানবাধিকার উদ্বেগ তৈরি করেছে।

সংস্থাটির ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, হাসিনার দমন-পীড়নমূলক শাসনামলের ওপর বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ রয়েছে। তবে সকল ফৌজদারি কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিশ্বাসযোগ্য বিচারের মাধ্যমে হাসিনার প্রশাসনের অধীনে সংঘটিত ভয়াবহ নির্যাতনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত।

এইচআরডব্লিউ জানায়, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, সাক্ষীদের জেরা করার পূর্ণাঙ্গ অধিকার এবং নিজের পছন্দমতো আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ না দেওয়া আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থতা। তাদের মতে, এ রায় সঠিক বিচার নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলবে।

সংস্থাটি আরও উল্লেখ করে, হাসিনা সরকারের অধীনেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্বিচারে গ্রেফতার, অন্যায্য বিচার এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নজিরও রয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরোধিতা করেছে। তারা বলেছে, জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরেই মৃত্যুদণ্ড বাতিলের আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে এ রায়কে তারা ভুক্তভোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে।

জাতিসংঘের তদন্তে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতায় প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেক শিশু ছিল। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ এখন জাতীয় সংহতি ও উত্তরণের পথ হিসেবে সত্য-প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ এবং ন্যায়বিচারের একটি ব্যাপক প্রক্রিয়া নিয়ে এগিয়ে যাবে। তিনি সবাইকে শান্ত থাকা ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিক্রিয়া

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মৃত্যুদণ্ডকে অমানবিক শাস্তি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং কোনো বিচারিক প্রক্রিয়ায় এর স্থান নেই বলে মন্তব্য করেছে।

সংস্থাটির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামাহ বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ীদের তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত। তবে এই বিচার নিরপেক্ষ বা ন্যায়সঙ্গত নয়।

অ্যামনেস্টি জানায়, আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচারের অনাকাঙ্ক্ষিত গতি এবং প্রতিরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে। পরস্পরবিরোধী সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর আসামিপক্ষকে জেরা করার সুযোগ না দেওয়া অন্যায্য বিচারের লক্ষণ।

তাদের মতে, এটি কোনো সুষ্ঠু বিচার ছিল না। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ভুক্তভোগীরা আরও ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের প্রয়োজন এমন একটি ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া যা পক্ষপাতের সন্দেহের বাইরে, সম্পূর্ণরূপে ন্যায্য ও নিরপেক্ষ হবে এবং মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন বাড়াবে না। সূত্র : বিবিসি বাংলা