শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

একই গ্রামের তিনজন পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ, উচ্ছ্বসিত গ্রামবাসী

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার একই গ্রামের তিন শিক্ষার্থী পেয়েছেন ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ। তারা সবাই শ্রীপুর উপজেলার ৭নং সব্দালপুর ইউনিয়নের সোনাতুন্দী গ্রামের বাসিন্দা।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

ফলাফলে দেখা যায়, সোনাতুন্দী গ্রামের তিন কৃতি শিক্ষার্থী দেশের তিনটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আরাফাত মাহমুদ মুগদা মেডিকেল কলেজে, নুরসাত জাহান তনিমা খুলনা মেডিকেল কলেজে এবং নাফিজ ইকবাল নিশান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ লাভ করেন।

জানা গেছে , সোনাতুন্দী উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে এ সাফল্য নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া তিন শিক্ষার্থীই স্থানীয় হাট দ্বারিয়াপুর সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তারা ২০২২ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ধারাবাহিক অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তাদের এই সাফল্যে পরিবার, বিদ্যালয়, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দ গর্বের অনুভূতি বিরাজ করছে।

আরাফাত মাহমুদ স্থানীয় দ্বারিয়াপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি সোনাতুন্দী গ্রামের ব্যবসায়ী আবু মাহমুদ মিয়া এবং স্কুল শিক্ষিকা শাহানারা হোসেনের ছেলে।

নুরসাত জাহান তনিমা স্থানীয় দ্বাড়িয়াপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি সোনাতুন্দী গ্রামের ব্যবসায়ী একেএম হাবিবুর রহমান এবং গৃহিণী শার্মিন আক্তারের মেয়ে।

এছাড়া মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন নাফিজ ইকবাল নিশান। তিনি বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি দিয়েছেন। তিনি শ্রীপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসে কর্মরত মফিজ উদ্দিন বিশ্বাস এবং স্কুল শিক্ষিকা নাজমা খাতুনের ছেলে।

চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে নাফিজ ইকবাল নিশান বলেন, এই সাফল্যের পেছনে আমার বাবা-মা, পরিবার, শিক্ষক ও শুভানুধ্যায়ীদের অবদান অপরিসীম। তাদের নিরন্তর উৎসাহ, দিকনির্দেশনা ও বিশ্বাসই আমাকে এই পর্যন্ত এগিয়ে এনেছে। পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় নানা চ্যালেঞ্জ ও হতাশার মুহূর্ত এলেও লক্ষ্য থেকে সরে যাইনি—আজ তারই ফল পেয়েছি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়া মানে শুধু নিজের স্বপ্ন পূরণ নয়, বরং একজন দায়িত্বশীল চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার অঙ্গীকার। ভবিষ্যতে সততা, মানবিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে চিকিৎসা পেশায় কাজ করতে চাই।

প্রাক্তন তিন শিক্ষার্থীর এই সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করে হাট দ্বারিয়াপুর সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী ইমাম হোসেন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের প্রাক্তন তিন শিক্ষার্থীর গৌরবময় এ অর্জনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। তাদের এ সাফল্য প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্বের। আমরা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছা. পান্না খাতুন বলেন, সোনাতুন্দী গ্রাম থেকে একসঙ্গে তিনজন শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া আমাদের ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এটি প্রমাণ করে—সঠিক দিকনির্দেশনা, অধ্যবসায় ও পরিবার-শিক্ষকদের সহযোগিতা থাকলে গ্রামাঞ্চল থেকেও সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। আমি এই কৃতী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাই এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। ইউনিয়ন পরিষদ সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে।

তিন শিক্ষার্থীর এ সাফল্যে গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক আনন্দ ও গর্বের অনুভূতি বিরাজ করছে। গ্রামবাসীরা আশা প্রকাশ করেছেন, এ সাফল্য আগামী দিনে এলাকার আরও শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় মনোনিবেশ করতে এবং চিকিৎসা পেশায় এগিয়ে আসতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।