মুক্তবাণী ডেস্ক : ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হাদির সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চও রাত ৯টা ৪৬ মিনিটে এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তার মৃত্যু নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব।
তিনি লেখেন, ‘যে বুলেট তুমি মাথা পেতে নিয়েছ, ভাই আমার, আমাদের সারাটা জীবন আমরা সেই বুলেট ফিরায়ে দেওবার রাজনীতি করে যাব, ইনশাআল্লাহ।’
তার পোস্টের মন্তব্যের ঘরে আবু বকর সিদ্দিক লেখেন, ‘নিশ্চয়ই। ওসমান হাদি ছিলেন একজন সত্যিকারের বীর। সাহস, আত্মত্যাগ আর ন্যায়বোধ ছিল তার চরিত্রের মূল শক্তি। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সত্যের পাশে দাঁড়িয়েছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। তার মতো মানুষেরা কখনো সত্যিকার অর্থে মারা যান না—তারা বেঁচে থাকেন মানুষের হৃদয়ে, তাদের কাজ ও আদর্শের মাধ্যমে।
ওসমান হাদির আত্মত্যাগ আমাদের শিখিয়ে যায় কীভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হয়, দেশ ও মানুষের জন্য নিজের সর্বোচ্চটা দিতে হয়। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু একজন বীর হিসেবে তার নাম ইতিহাসে ও আমাদের স্মৃতিতে চিরদিন অমর হয়ে থাকবে। আল্লাহ তার আত্মাকে শান্তি দান করুন।’
এইচ এ কে সাইফুল্লাহ লেখেন, আজকের এই রাতটা শুধু শোকের নয়— এটা স্মরণ করার, ইতিহাসে নাম রেখে যাওয়ার রাত। বাংলার প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি ক্লিনিকে, প্রতিটি হাসপাতালে— আজ যেসব মা ও বোনের কোল জুড়ে আসবে একটি করে পুত্রসন্তান, তারা চাইলে সেই সন্তানের নাম রাখতে পারেন— হাদি বা ওসমান হাদি। একজন বিপ্লবীকে স্মরণ করে, একজন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানুষকে মনে রেখে, একটি নামের মধ্য দিয়ে একটি বার্তা বাঁচিয়ে রাখার জন্য। নাম শুধু নাম নয়— নাম কখনো কখনো ইতিহাস হয়, প্রতিবাদ হয়, স্মৃতি হয়। ইনশাআল্লাহ, বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নেবে ন্যায়, সাহস আর প্রতিবাদের উত্তরাধিকার। এই বার্তাটা শেয়ার করে, কপি করে পৌঁছে দিন— প্রতিটি মায়ের ফেসবুক ও টুইটারের ওয়ালে। যেন একটি নাম, একটি স্মৃতি, একটি প্রতিবাদ বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।
এমডি রাসেল রানা লেখেন, যদি রক্ত দিয়ে গায়ের জামা ভিজে যায় তবে ইতিহাস বদলে যাবে। কথাটা বাস্তবতায় রূপ নেবে এবার ইনশাআল্লাহ। বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আমার। তারপরও বলব নিশ্চয়ই আল্লাহ যা করে মঙ্গলের জন্য করে। হাদি ভাই যেটা চেয়েছিল সেটাই হয়েছে। বিড়ালের মত ৫০ বছর বেঁচে না থেকে সিংহের মত ৫ বছর বেঁচে থাকা উত্তম। হাদি ভাইয়ের দেখিয়ে দেওয়া পথে বাংলার লাখো কোটি হাদি রক্ত গঙ্গায় হেঁটে যাবে। ইনকিলাব জিন্দাবাদ। মহান আল্লাহ পাক হাদি ভাইকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমিন…..
গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তারপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন ওসমান হাদি।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে হাদিকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে অবতরণের প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে নিরাপদে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এরপর ওসমান হাদির মাথায় একটি জরুরি অস্ত্রোপাচারের প্রয়োজনের কথা জানায় চিকিৎসক দল। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুরেই জরুরি অস্ত্রোপচার অনুমতি দেয় হাদির পরিবার।
এ তথ্য নিশ্চিত করে তখন ওসমান হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এডমিন পোস্টে বলা হয়, ওসমান হাদি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরেই অপারেশন করবার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।