শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বড় মাত্রার ভূমিকম্প: কী করবেন, কী করবেন না

স্টাফ রিপোর্টার: আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী, আর উৎপত্তিস্থলে ভূকম্পনের গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।

হঠাৎ অনুভূত কম্পনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ভবন থেকে নিচে নেমে আসে। এখন পর্যন্ত পুরান ঢাকার বংশালে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে; পাশাপাশি বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছেন।

অধিকাংশ মানুষের মনে একটি ভুল ধারণা আছে যে ভূমিকম্প চলাকালে দৌড়ে নীচে নেমে যেতে হবে যা ঢাকার মত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খুবই বিপদজনক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তারা মনে করেন, বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া অত্যন্ত জটিল; কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকম্পের সময় বা মাত্রা আগে থেকেই নির্ণয় করা যায় না।

আবহাওয়াবিদদের মতে, সাম্প্রতিক একাধিক হালকা ভূকম্পন বড় বিপদের ইঙ্গিত হতে পারে। তবে পূর্বাভাস দেওয়া অসম্ভব বলেই জনগণের সচেতনতা এবং প্রস্তুতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ভূমিকম্পের সময় কী করবেন

  • ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হবেন না; শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
  • ‘ডাক–কভার–হোল্ড’ অনুসরণ করুন। কম্পন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কাছের কোনো মজবুত টেবিল, ডেস্ক বা ভারী আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন। মাথা ও ঘাড় দু’হাত দিয়ে ঢেকে রাখুন এবং টেবিলের পা শক্ত করে ধরে রাখুন।
  • বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকলে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করবেন না। সিঁড়ি, লিফট বা বারান্দায় ছুটলে মারাত্মক ঝুঁকি বাড়ে।
  • বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে নিকটস্থ শক্ত টেবিল বা আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন।
  • রান্নাঘরে থাকলে দ্রুত গ্যাসের চুলা বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে বেরিয়ে আসুন।
  • ঘরের ভেতরে বিম, কলাম বা পিলারের কাছে অবস্থান নিন।
  • স্কুলে থাকলে ব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত টেবিল বা বেঞ্চের নিচে আশ্রয় নিন।
  • ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু ভবন, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে খোলা জায়গায় যান।
  • গার্মেন্টস, হাসপাতাল, মার্কেট বা সিনেমা হলে ভিড় বা ধাক্কাধাক্কি না করে হাত দিয়ে মাথা ঢেকে বসে পড়ুন।
  • গাড়িতে থাকলে উড়ালসড়ক, সেতু, গাছ বা বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামিয়ে কম্পন থামা পর্যন্ত ভেতরে থাকুন।
  • কম্পন থামলে নিরাপদে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিন।
  • বাসায় সবসময় টর্চলাইট, ব্যাটারির রেডিও, পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম মজুত রাখুন।
  • ভবন নির্মাণে অবশ্যই বিল্ডিং কোড অনুসরণ করুন।

ভূমিকম্পের সময় কী করবেন না

  • কম্পনের সময় লিফট ব্যবহার করবেন না এবং তাড়াহুড়ো করে দৌড়াবেন না।
  • কম্পন না থামলে কোনভাবেই বাসা থেকে বের হওয়ার কিংবা নীচে নামার চেষ্টা করবেন না।
  • ওপর তলা থেকে লাফ দিয়ে নামার চেষ্টা করবেন না।
  • ভাঙা দেয়াল বা ধসে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়া করবেন না; কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন যেন ধুলা–বালি শ্বাসে না ঢোকে।
  • প্রথম কম্পনের পরই নিরাপদ ভাববেন না – পরবর্তী কম্পন হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভূমিকম্প কখন হবে তা নির্দিষ্টভাবে বলা না গেলেও—প্রস্তুত থাকা ছাড়া বিকল্প নেই। তারা প্রত্যেক পরিবার, স্কুল, অফিস এবং কারখানায় নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া চালু রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক এই মাঝারি মাত্রার ভূকম্পন রাজধানীর নাগরিকদের আবারও মনে করিয়ে দিল—এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা, প্রস্তুতি এবং সঠিক আচরণই জীবন রক্ষার সর্বোত্তম উপায়।